গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত এ ছয় ঋতু নিয়ে গঠিত আমাদের আবহাওয়া।

প্রকৃতির পালাবদলে নেচে ওঠে গ্রামগঞ্জের সবুজ মাঠ-প্রান্তর। ঋতুচক্রে শীত সত্যিই মহান স্রষ্টার অপার মহিমা। শীত অধিকাংশ মানুষেরই প্রিয় ঋতু। আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের কাছে এ মৌসুম আরও প্রিয়। কেননা অন্যান্য মৌসুমের চেয়ে এ মৌসুমে সহজে বেশি ইবাদত করা যায়। শীতের মৌসুম আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত।

এ মৌসুমে আমরা আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামত উপভোগ করি। পিঠা, পায়েস, খেজুরের রস, গুড় এবং বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, তরিতরকারি ও শীত নিবারণের বস্ত্রাদি সবই মহান আল্লাহর দান। আল্লাহ যাদের এসব নিয়ামত দান করেছেন তাদের উচিত মেহেরবান রবের শুকরিয়া আদায় করা। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর তাহলে তোমাদের প্রতি আমি আমার নিয়ামত আরও বাড়িয়ে দেব।’ সুরা ইবরাহিম আয়াত ৭।

শীতকালে আমরা অধিকহারে ঠান্ডা আর গ্রীষ্মকালে প্রচ- গরম অনুভব করি। এ দুই কালে ঠান্ডা ও গরমের প্রচ-তার কারণ কী তা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘জাহান্নাম তার প্রতিপালকের কাছে এই বলে অভিযোগ করেছিল, হে আমার প্রতিপালক! প্রচ- উত্তাপের কারণে আমার এক অংশ অন্য অংশকে গ্রাস করে ফেলেছে। তখন আল্লাহতায়ালা জাহান্নামকে দুটি শ্বাস ফেলার অনুমতি দিলেন।

একটি শীতকালে অন্যটি গ্রীষ্মকালে। আর সে দুটি হলো তোমরা গ্রীষ্মকালে যে প্রচ- উত্তাপ আর শীতকালে যে প্রচ- ঠান্ডা অনুভব কর তা।’ বুখারি, মুসলিম। অন্য বর্ণনায় এসেছে, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা গরমের যে প্রচ-তা অনুভব কর তা জাহান্নামের গরম নিঃশ্বাসের কারণেই। আর শীতের তীব্রতা যা পাও তা জাহান্নামের ঠান্ডা নিঃশ্বাসের কারণেই।’ বুখারি।

হজরত ওমর (রা.) বলেছেন, ‘শীতের মৌসুম হলো ইবাদতকারীদের জন্য গনিমতস্বরূপ।’ শীতের মৌসুম নফল রোজা রাখার জন্য সুবর্ণকাল। কাজা রোজা বাকি থাকলে তা আদায় করার জন্যও শীতের দিন অতি উপযোগী। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, ‘শীতকাল হচ্ছে মুমিনের বসন্তকাল।’ মুসনাদে আহমাদ।

বায়হাকির বর্ণনায় এসেছে, ‘শীতের রাত দীর্ঘ হওয়ায় মুমিন বান্দা রাতে নফল নামাজ আদায় করতে পারে এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখতে পারে।’ শীতকাল এলে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলতেন, ‘হে শীতের মৌসুম! তোমাকে স্বাগত। শীতকালে বরকত নাজিল হয়; শীতকালে রাত দীর্ঘ হওয়ায় নামাজ আদায় করা যায় এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখা যায়।’ হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.)-এর মৃত্যুর সময় তাঁকে তাঁর কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি মৃত্যুর ভয়ে কাঁদছি না; বরং গ্রীষ্মের দুপুরের তৃষ্ণার্ত থেকে রোজা রাখা, শীতের রাতে দাঁড়িয়ে থেকে নফল নামাজ আদায় এবং ইলমের আসরগুলোয় হাজির হয়ে আলেমদের সোহবত হারানোর দুঃখে কাঁদছি।’

এহইয়াউল উলুমদ্দিনে ইমাম গাজ্জালি (রহ.) লেখেন, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী (সা.) বলেছেন, যদি কোনো তীব্র ঠান্ডার দিন আল্লাহর কোনো বান্দা বলে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু (আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই), আজকের দিনটি কতই না শীতল! হে আল্লাহ! জাহান্নামের জামহারি থেকে আমাকে মুক্তি দিন। তখন আল্লাহ জাহান্নামকে বলেন, নিশ্চয়ই আমার এক বান্দা তোমার জামহারি থেকে আশ্রয় চেয়েছে। আমি তোমাকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি তাকে আশ্রয় দিলাম।

সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেন, জামহারি কী, ইয়া রসুলুল্লাহ! নবী (সা.) বললেন, জামহারি এমন একটি ঘর যাতে অবিশ্বাসী, অকৃতজ্ঞদের নিক্ষেপ করা হবে এবং এর ভিতরে তীব্র ঠান্ডার কারণে তারা বিবর্ণ হয়ে যাবে।’ শীতকালে সঠিকভাবে অজু করা, অজুর অঙ্গ ধোয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা; প্রতিটি অঙ্গের যতটুকু স্থানে পানি পৌঁছানো দরকার ততটুকু স্থানে পানি পৌঁছানো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ আমল।

রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তিনটি আমল পাপ মোচন করে- সংকটকালীন দান, গ্রীষ্মের রোজা ও শীতের অজু।’ তাবরানি। তীব্র শীতে কষ্ট হলে গরম পানি দিয়ে অজু করায় কোনো বাধা নেই। অজুর পর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মুছে ফেলায়ও সমস্যা নেই। শীতের তীব্রতা যদি কারও সহ্যের বাইরে চলে যায়, পানি গরম করে ব্যবহার করার সুযোগ না থাকে এবং ঠান্ডা পানি ব্যবহারে শারীরিকভাবে ক্ষতি হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে তাহলে তিনি অজুর পরিবর্তে তায়াম্মুম করতে পারেন।

বায়হাকি।

কলমকথা/বি সুলতানা